Pages

গ্রাম হবে শহরঃ শরণখোলা

December 13, 2018


Celebrating the decade of development:Ten years of digital Bangladesh

“গ্রাম হবে শহর”

শরণখোলার উন্নয়নে প্রস্তাবনা

By: Mostofa Zaman

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে এক দশক পূর্ণ হল। ডিজিটাল বাংলাদেশ কেবলমাত্র আইসিটি সংক্রান্ত উন্নয়ন কার্যক্রম নয় বরং ইহা বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের প্রতিপাদ্য শ্লোগান এবং সোপান। ডিজিটাল বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের উন্নয়নে আমূল পরিবর্তন এসেছে। তাই, বিগত দশ বছর বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বর্নালী দশক হিসেবে বিবেচ্য। উচ্চাভিলাষী, দূরদর্শী ও নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া কোনো দেশের জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়
বিশ্বে জাতিসংঘ এবং বিশ্বব্যাংক বিভিন্ন দেশের উন্নয়নের শ্রেণিকরণ করে থাকে – জাতিসংঘের তিন শ্রেণিকরণঃ স্বল্পোন্নত দেশ, উন্নয়নশীল দেশ ও উন্নত দেশ এবং বিশ্বব্যাংকের চার শ্রেণিকরণঃ নিম্ন আয়ের দেশ, নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ, উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ ও উচ্চ আয়ের দেশ। বাংলাদেশ এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের স্বল্পোন্নত দেশ এবং ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার প্রাথমিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। বাংলাদেশ যে এখন ২০৩১ সাল নাগাদ উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে তা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। বিশেষকরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিগত ১০ বছরের বাংলাদেশ উন্নয়ন কার্যক্রমসমূহ লক্ষ্যভিত্তিক ও পরিকল্পিত, যা বাংলাদেশের উন্নয়নে এক নবদিগন্ত উম্মোচন করেছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক গৃহীত উন্নয়ন পরিকল্পনাসমূহঃ ১। ডিজিটাল বাংলাদেশ, ২। রূপকল্প-২০২১, ৩। রূপকল্প-২০৪১, ৪। বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং রূপকল্প-২০২১ ইতোমধ্যে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। ২০৩১ সাল নাগাদ উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি উপজেলা ভিত্তিক সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়নকরতঃ বাস্তবায়নের মাধ্যমে তৃণমূল থেকে উন্নয়নের ভীত গড়া জরুরী, যা রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নেও সহায়ক হবে। দল মত নির্বিশেষে সকল নাগরিককে দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে

তাই, আমি, মোস্তফা জামান, একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে ২০৩১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার লক্ষ্য অর্জন তথা শরণখোলাকে শহরে রূপান্তরকরণে সংশ্লিষ্ট সকলের বিবেচনার জন্য শরণখোলা উপজেলার উন্নয়নের রূপরেখার একটি প্রস্তাবনা প্রণয়ন করেছি, যা নিম্নরূপঃ     

১। উপজেলা ইনকিউবেশন হাব এবং জব সেন্টার স্থাপন করাঃ উপজেলায় একটি ইনকিউবেশন হাব প্রতিষ্ঠা করা যেখানে বেকার বা ঝরে পড়া যুবকদেরকে টেকনোলজি সংক্রান্ত ট্রেনিং দিয়ে ফ্রিল্যান্স হিসেবে কাজ করার জন্য কমপক্ষে ১০০ স্পেস তৈরি করে দেয়া এবং একইসাথে জব সেন্টার স্থাপন করে বেকার যুবকদের জন্য দেশে বা বিদেশে চাকরীর তথ্য এবং যোগাযোগ স্থাপনে সহযোগিতার ব্যবস্থা করতে হবে।    

২। ইউনিয়ন ভিত্তিক মডেল গ্রাম্য পাইকারি বাজার স্থাপন করাঃ  শরণখোলায় মূল কৃষির পাশাপাশি শাক সব্জির ব্যাপক চাষ হয়। কিন্তু  মধ্যস্বত্বভোগীর কারনে প্রান্তিক কৃষকরা তাদের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। তাই, প্রত্যেকটি ইউনিয়নে একটি করে মডেল গ্রাম্য পাইকারি বাজার প্রতিষ্ঠা করে প্রান্তিক কৃষকদের জন্য ন্যায্যমূল্যে তাদের দ্রব্য বিক্রয় নিশ্চিত করতে হবে   

৩। শিশু পার্ক স্থাপন করাঃ শরণখোলায় শিশুদের জন্য কোনো ধরনের পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্র নেই। তাই, একটি শিশু পার্ক স্থাপন করতে হবে

৪। ক্ষুদ্রশিল্প মিনি জোন প্রতিষ্ঠা করাঃ শরণখোলার ৩নং ইউনিয়নের রসুলপুর এলাকায় ভোলা নদীতে চর পড়ে অনেক খাস জমি বেরিয়েছে। ১০০ একর জায়গা নিয়ে ১০০ টি প্লট বরাদ্ধ দিয়ে ক্ষুদ্রশিল্প প্রতিষ্ঠা করে অত্র উপজেলার নিজস্ব অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তুলতে হবে। ইহা বেকারত্ব দূর করতেও সহায়ক হবে। ক্ষুদ্রশিল্পগুলো এমন হতে পারে –সাবান, মোমবাতি, কলম, দিয়াশলাই, খেলনা ইত্যাদি। ইহা রপ্তানির সম্ভাবনাও তৈরি করবে।  

ডিসেলাইন প্লান্ট স্থাপন করাঃ শরণখোলা উপজেলায় পানির সমস্যা প্রকট। এখানকার পানি লবণাক্ত এবং গভীর নলকূপ বসানো যায় না। তাই, উপজেলায় একটি বা প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে ডিসেলাইন প্ল্যান্ট স্থাপন করে পানির সমস্যা দূর করতে হবে  

৬। মৎস্য প্রসেসিং জোন স্থাপন করাঃ শরণখোলায় ৪নং ইউনিয়নের সোনাতলা এলাকায় ভোলা নদীতে চর পড়ে অনেক খাস জমি বেরিয়েছে। ৫০ একর জায়গা নিয়ে ৫০ টি প্লট বরাদ্ধ দিয়ে একটি বিশেষ মৎস্য জোন প্রতিষ্ঠা করে অত্র উপজেলার নিজস্ব অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তুলতে হবে। ইহা বেকারত্ব দূর করতেও সহায়ক হবে। শরণখোলায় কয়েক হাজার মৎস্যজীবী রয়েছে। তাদেরকে আধুনিক মৎস্য সংগ্রহের ট্রেনিং এবং সরঞ্জাম দিয়ে সহযোগিতা করে একটি টেকসই মৎস্য জোন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

৭। বগীতে নদীর স্রোতের চ্যানেল রিরূটিং-এর ব্যবস্থা করাঃ শরণখোলার ৪নং ইউনিয়নের বগী এলাকায় ব্যাপক নদী ভাঙ্গন হয়। বাধ নির্মান সহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও রোধ হয় নি। নদীর স্রোত সাধারণত একাধিক চ্যানেলে প্রবাহিত হয়। তাই, নিম্মভাগের পানির প্রবাহ রিরূটিং-এর ব্যবস্থা করে নদী ভাঙ্গন রোধ করতে হবে।  

৮। একাবিংশ শতাব্দীর শিক্ষা ব্যবস্থার উপর গবেষণাপ্রসূত একটি করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করাঃ শরণখোলা উপজেলায় একটি করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করা যা একাবিংশ শতাব্দীর শিক্ষায় বিশ্বের সফল প্রতিষ্ঠানের আদলে গঠিত হবে এবং বিদ্যালয়সমূহের একাডেমিক ব্যবস্থাপনার উপর গবেষণাভিত্তিক ডাটা তৈরি করে দেশের একাবিংশ শতাব্দীর শিক্ষা ব্যবস্থার পথিকৃৎ হবে। 
   
৯। নদী ও বনজসম্পদ (বালু, মৎস্য,গাছ) আহরণে উপজেলার স্বার্থরক্ষা করাঃ শরণখোলা নদী এবং সুন্দরবন বেষ্টিত একটি উপজেলা। তাই, অত্র উপজেলার অনেক মানুষের জীবিকা বালু, মৎস্য এবং গাছ আহরণে নির্ভরশীল। কিন্তু অনেক সময় অবৈধ আহোরণ উপজেলার ইকো-সিস্টেমকে ক্ষতিগ্রস্থ করেতাই, ইহার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং উপজেলার স্বার্থ রক্ষা করে বালু, মৎস্য এবং গাছ আহরণের ব্যবস্থা করতে হবে।     

১০। গ্লোবাল সিটিজেনশীপ ধারনার উপর সচেতনতা বৃদ্ধি করাঃ একজন নাগরিকের তার বসবাসের স্থান বা দেশের জন্য যেমন দায়িত্ব আছে তেমনি সমগ্র ভূমণ্ডলের অস্তিত্ব রক্ষায়ও দায়িত্ব রয়েছে। তাই, উপজেলার জনগণকে গ্লোবাল সিটিজেনশীপ ধারনা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।   

১১। উপজেলার সর্বত্র ওয়াইফাইর অপটিক ফাইবার সংযোগ দেয়াঃ ইতোমধ্যে সরকার উপজেলা সদরে অপটিক ফাইবার বসানোর কাজ শুরু করেছে। তাই, সদর থেকে যতদ্রুত সম্ভব উপজেলার সর্বত্র ওয়াইফাইর অপটিক ফাইবার সংযোগের আওতায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে।  

১২। সকল বাজারে সুয়ারেজ/ড্রেনেজ ব্যবস্থা করাঃ উপজেলার সকল প্রধান বাজারসমূহের জন্য পরিকল্পিত সুয়ারেজ/ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যাতে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয়। 

১৩। খাস জমি অবৈধ-দখল মুক্ত করাঃ শরণখোলার যে সমস্ত খাস জমি অবৈধ দখলে আছে তা দখল মুক্ত করে সরকারের নিয়মানুযায়ী প্রান্তিক মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের কাজে অত্র জমি ব্যবহার করতে হবে।  

১৪। নদীভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থদের পূনর্বাসন পল্লী স্থাপন করাঃ শরণখোলার ৪নং ইউনিয়নের বগী এলাকায় নদীভাঙ্গনে অনেক পরিবার সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। অপরদিকে, ৩নং ও ৪নং ইউনিয়নে ভোলা নদী ভরাট হয়ে অনেক জমি ব্যবহারযোগ্য হয়েছে। তাই,ভাঙ্গনকবলিত পরিবারের জন্য ভরাট হওয়া জমিতে পূনর্বাসনপল্লী স্থাপন করতে হবে      

১৫। মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করাঃ শরণখোলায় কোনো মহিলা কলেজ নেই। তাই, অত্র উপজেলায় একটি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে
   
১৬। উপজেলাকে কর্দমাক্তরাস্তা মুক্ত করাঃ শরণখোলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় অবকাঠামোগত অনেক কাজ হয়েছে। তাই, উপজেলার কোথাও কর্দমাক্তরাস্তা থাকবে না এবং গ্রামীন রাস্তা ইউনিব্লকের হবে–এ রকম পরিকল্পনা নিতে হবে।      

১৭। রায়েন্দাকে পৌরসভা করাঃ শরণখোলা একটি উপকূলীয় উপজেলা। স্বাধীনতার পরবর্তী অনেককাল যাবত অত্র উপজেলা অবহেলিত ছিল। তাই, উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে রায়েন্দাকে পৌরসভায় উত্তীর্ণ করতে হবে    
১৮। ইকো-টুরিজম কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করাঃ উপজেলার ৪নং ইউনিয়নের সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় একটি পরিকল্পিত ইকো-টুরিজম কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে      

১৯। সমগ্র উপজেলা বিদ্যুৎ সংযোগের আওতাভুক্ত করা এবং পর্যায়ক্রমে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুতের সংযোগ দেয়াঃ বর্তমানে সমগ্র উপজেলার বিদ্যুৎ সম্প্রসারনের কাজ চলমান রয়েছে। তাই, ইহা নিশ্চিত করতে হবে যে শতভাগ বিদ্যুতায়ন না করে অত্র চলমান সম্প্রসারনের কাজ থেমে না যায়। তাছাড়া, পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে উপজেলায় ভূগর্ভস্থ বিদ্যুতের সংযোগ স্থাপন করতে হবে।          

২০। উপজেলা প্রশাসনিক সদরসহ সকল বাজারসমূহের জন্য আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলাঃ আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে উপজেলা সদর এবং উপজেলার বাজারসমূহকে সিসিটিভির আওতাভুক্ত করতে হবে এবং উপজেলার বাজারগুলোর জন্য একটি স্বতন্ত্র নিরাপত্তা দল গঠন করতে হবে   

২১। উপজেলাকে মাদক মুক্ত করাঃ উপজেলায় মাদকের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি মাদক ব্যাবসায়ীরা পার্শ্ববর্তী উপজেলার মাদকের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে শরণখোলাকে ব্যবহার করে থাকে। তাই, শরণখোলাকে শতভাগ মাদক মুক্ত করতে হবে।  

২২। কৃষিতে ব্যাপকভাবে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও টেকনোলজির ব্যবহার বৃদ্ধি করাঃ শরণখোলা একটি কৃষি প্রধান উপজেলা। সকল চাষযোগ্য জমির সৎব্যবহার নিশ্চিতকল্পে অল্পসময়ে ফসল সংগ্রহের বীজ সহজলভ্য করতে হবে এবং আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবেসফল কিছু কৃষকদেরকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কৃষি সংক্রান্ত মেলায় অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে যেমন চায়নার বার্ষিক কৃষি মেশিনারিজ মেলা যাতে শরণখোলার কৃষকরা আধুনিক যন্ত্রপাতির সাথে পরিচিত হতে পারে এবং উহা ব্যবহারে উৎসাহী হয়। 
     
২৩। প্রয়োজনানুযায়ী যাত্রী ছাউনি এবং পাবলিক টয়লেট স্থাপন করাঃ উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নের জনযোগাযোগের প্রধান স্থানে যাত্রী ছাউনি এবং পাবলিক টয়লেট স্থাপন করতে হবে।       

২৪। কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন করাঃ শরণখোলা উপজেলার ২ নং খোন্তাকাটা ইউনিয়নে তুলনামূলক অনেক আলু চাষ হয়। কিন্তু সংরক্ষণের জায়গার অভাবে প্রান্তিক কৃষকরা অনেকসময় কম দামে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হয়। অনেকসময় কৃষকরা ঢাকা বা তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিয়ে বেশী ভাড়া দিয়ে স্টোরেজ-এ রাখেন। তাই, উপজেলায় একটি কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন করতে হবে।     

২৫। প্রয়োজনানুযায়ী কালভার্ট স্থাপন করাঃ উপজেলার বিভিন্ন খালে পুল এবং কালভার্ট তৈরি করা হয়। কিন্তু, লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে – পুল কয়েক মাস/বছর পরেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যায় এবং মেরামতের জন্য আবার অতিরিক্ত অর্থ খরচ হয়। তাই, উপজেলার পুল না বানিয়ে পরিকল্পনা করে ক্রমান্বয়ে কালভার্ট তৈরি করতে হবে। ইহাতে যোগাযোগ ব্যবস্থার স্থায়ীত্ব বাড়বে এবং দীর্ঘ মেয়াদে খরচ ও কম হবে।  
  
২৬। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিও ভুক্ত করা এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে একটি নাগরিক কমিটি করাঃ উপজেলার যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও ভুক্ত হয় নি সেগুলোকে এমপিও ভুক্ত করতে হবেউপজেলার সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মানোন্নয়নে একটি বিশেষ নাগরিক কমিটি করতে হবে, যে কমিটি স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং উপজেলা চেয়ারম্যানকে প্রতিবেদন দিবেন যাতে তারা সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের সহযোগিতায় শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন।    

২৭। সুন্দরবন গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করাঃ শরণখোলা সুন্দরবন সংলগ্ন একটি উপকূলীয় উপজেলা। তাই, সুন্দরবন এবং আবহাওয়া পরিবর্তনের উপর মাঠ পর্যায়ে গবেষণা এবং কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের জন্য একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।      

২৮। যুব মেধা বিকাশ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করাঃ বাংলাদেশের গ্রামীন সমাজ একটি বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যুবকদেরকে যথাযথভাবে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়াস দরকার। তাই, একটি যুব মেধা বিকাশ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।  

২৯। রায়েন্দা-মাছুয়া ফেরি সংযোগ দেয়াঃ উপজেলার বলেশ্বর নদীর অপরপ্রান্তে মঠবাড়ীয়া উপজেলার মাছুয়ার অবস্থান। এ দুই উপজেলার মানুষ নানাকারনে দৈনন্দিন যাতায়াত করে থাকেন। তাই, অত্র দুই উপজেলার মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে রায়েন্দা-মাছুয়া ফেরি সংযোগ দিতে হবে 
      
৩০। করযোগ্য সকলকে কর প্রদানে উৎসাহিত করাঃ উপজেলার সকল আয়করযোগ্য নাগরিককে আয়কর প্রদানে উৎসাহিত করতে হবেএজন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করে সকলকে জানাতে হবে যে – আয়কর দেয়া সকল করযোগ্য নাগরিকের দায়িত্ব।   

৩১। ইউনিয়ন ভিত্তিক ভূমিহীন যুব বাজার প্রতিষ্ঠা করাঃ উপজেলায় সকল ইউনিয়নের প্রানকেন্দ্রে একটি করে বিশেষ বাজার স্থাপন করতে হবে যেখানে শুধুমাত্র ভুমিহীন যুবক বেকারদের জন্য দোকান বরাদ্ধ দেয়া হবে যাতে তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পায়     

৩২। উপজেলা কেন্দ্রীয় কবরস্থান এবং শ্মশানঘাট প্রতিষ্ঠা করাঃ উপজেলায় কোনো গণকবর স্থান নেই, নেই কোনো গণ শ্মশানঘাট। তাই, একটি কেন্দ্রীয় কবরস্থান এবং শ্মশানঘাট প্রতিষ্ঠা করতে হবে   

৩৩। উপজেলার সকল শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামে রাস্তার নামকরণ করাঃ উপজেলার সকল শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামে তাদের বাড়ীর কাছের কোনো রাস্তার নামকরণ করতে হবেপ্রসিদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের নামেও রাস্তার নামকরণ করতে হবে 
  
৩৪। রায়েন্দার খাল সম্মুখে নাব্যতা সংকট দূরীকরণে ড্রেজিং-এর ব্যবস্থা করাঃ উপজেলার প্রধান খালটি ভরাট হয়ে গেছে। এমনকি ইঞ্জিন চালিত ট্রলারও ভাটির সময় চলাচল করতে পারে না। তাই, রায়েন্দার খাল সম্মুখে নাব্যতা সংকট দূরীকরণে ড্রেজিং-এর ব্যবস্থা করতে হবে।   

৩৫। উপজেলা সদরে ভূগর্ভস্থ পানির সংযোগ চালু করাঃ উপজেলা সদর- এর বসবাসের কাঠামো ইতোমধ্যে পরিবর্তন হয়েছে যেমন এখন অনেক মানুষ বাড়ি ভাড়া নিয়েও বসবাস করে। বিগত সময়ে সদর এলাকার বাসিন্দাদের পানির উৎস ছিল পুকুর বা খাল। কিন্তু বসবাসের কাঠামো পরিবর্তনের জন্য পুকুর বা খাল থেকে পানি সংগ্রহ অবাস্তব হয়ে পড়েছে। তাই, উপজেলা সদরে ভূগর্ভস্থ পানির সংযোগ স্থাপন করতে হবে   
  
৩৬। উপজেলা বহুমূখীব্যবহার উপযোগী একটি স্টেডিয়াম করাঃ শরণখোলায় কোনো স্টেডিয়াম নেই। তাই, সকল প্রকার খেলার জন্য একটি স্টেডিয়াম প্রতিষ্ঠা করতে হবেস্টেডিয়াম-এর নিচে বা পাশে উপজেলার প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি মার্কেট প্রতিষ্ঠা করতে হবে      

৩৭। হিফজসহ একটি আধুনিক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করাঃ উপজেলার অনেক শিক্ষার্থী ভাল মাদরাসায় পড়ালেখা করার জন্য অন্যত্র গিয়ে ভর্তি হয়। তাই, শরণখোলায় হিফজসহ একটি আধুনিক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

৩৮। পরিবেশ বান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলাঃ  উপজেলার সদরের বর্জ্য সংগ্রহের জন্য পরিবেশ বান্ধব পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং একটি রিসাইকেল প্ল্যান্ট স্থাপন করে বর্জ্যের পূনঃব্যবহারেরও ব্যবস্থা করতে হবে।    

৩৯। বহুমূখী ব্যবহার উপযোগী একটি পাবলিক পরীক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করাঃ উপজেলায় সিসিটিভি সংযোগ সম্বলিত একটি পাবলিক পরীক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে যেখানে বড় একটি অডিটোরিয়াম থাকবে যাতে সকল জাতীয় অনুষ্ঠান, দিবস বৃহৎ আকারে পালন করা যায়। 

৪০। দেশে/বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য একটি বিশেষায়িত ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করাঃ দক্ষ জনশক্তি অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি চাবিকাঠি। তাই, উপজেলার সকল বেকার যুবকদের দেশে বা বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ এর ব্যবস্থা করতে হবে যাতে তারা গার্মেণ্টস, কলকারখানার চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পায়।
    
৪১। উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার করাঃ শরণখোলায় একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নেই। তাই, খোলামেলা জায়গা নিয়ে একটি শহীদ মিনার স্থাপন করতে হবে  

৪২। একটি নান্দনিক স্বাধীনতা চত্বর স্থাপন করাঃ শরণখোলার উপজেলার সদরে একটি নান্দনিক স্বাধীনতা চত্বর স্থাপন করতে হবে যা বিকল্প পার্ক হিসেবেও ব্যবহার উপযোগী হবে।  

৪৩। পানগুছি সেতু নির্মাণ করাঃ শরণখোলা উপজেলার সকল মানুষের জেলা, বিভাগ ও রাজধানী শহরে যাতায়াতের জন্য মোড়েলগঞ্জ-এর পানগুছি নদীতে সেতু নির্মাণ করতে হবে  

৪৪। উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড নিয়ে বাৎসরিক নাগরিক মতবিনিময় সভা করাঃ উপজেলা প্রশাসন এবং সকল জনপ্রতিনিধির উপস্থিতিতে নানা শ্রেনি পেশার মানুষদের অংশগ্রহণে একটি বাৎসরিক মতবিনিময় সভার আয়োজন করতে হবে, যাতে সাধারণ জনগণ উপজেলার উন্নয়নমূলক কাজের মূল্যায়ন এবং মতামত প্রদানের সুযোগ পায়। 
  
৪৫। সরকারের সকল উন্নয়নমূলক কার্যক্রম তৃনমূলে সুষম বাস্তবায়ন নিশ্চিত করাঃ বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম এবং কল্যাণমূখী রাষ্ট্র হিসেবে নানারকম ভাতার ব্যবস্থা করে থাকে। স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধির সমন্বয়ে সরকারের সকল উন্নয়নমূলক কার্যক্রম তৃণমূলে সুষম বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।      

৪৬২০৩১ লক্ষ্য অর্জনে প্রস্তাবিত শরণখোলার উন্নয়ন রূপরেখা বাস্তবায়নের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে স্থানীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে সরকারের সহযোগিতা নিয়ে শরণখোলার সার্বিক উন্নয়নে এগিয়ে চলাঃ অত্র প্রস্তাবনার সকল উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য সকল স্টেকহোল্ডার একত্র হয়ে কাজ করতে হবে। তাই, উপজেলার উন্নয়নে নিবেদিত মানুষদের নিয়ে একটি কার্যকারী কমিটি গঠন করতে হবে – যে কমিটি স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে অত্র প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে সার্বিক পরামর্শ এবং সহযোগিতা প্রদান করবে।